লালমনিরহাটের এম. টি. হোসেন ইনসটিটিউটে শনিবার (৪ মার্চ) শেষ হলো লালমনি লোকউৎসব। এ উৎসব ছড়িয়ে পড়েছিল উত্তরের সীমান্তবর্তী লালমনিরহাট জনপদে। অনেক গুণী শিল্পী গান গেয়ে মাতিয়ে রাখেন দর্শক-শ্রোতাকে। লালমনিরহাটের এম. টি. হোসেন ইনসটিটিউটে শুরু হওয়া উৎসবে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত সংস্কৃতি প্রেমিদের মিলনমেলায় পরিণত হয় ফায়ার সার্ভিস রোড বাবুপাড়াস্থ সবুজ মাঠ।
বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) সন্ধ্যায় লালমনি লোকউৎসবের উদ্বোধন করেন লালমনিরহাট-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি।
গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি বলেন, আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি নিয়ে আমরা গর্বিত। এই গর্বটা আমাদের বুকে ধারণ করে রাখতে হবে যেন কেউ আমাদের ছোট করতে না পারে। আমাদের সংস্কৃতি অন্য সংস্কৃতির অধীনস্থ হয়ে গেলে আমরা বিলীন হয়ে যাবো। কোন একটা দেশকে আঘাত করতে হলে প্রথমে তাদের সংস্কৃতিকে আঘাত করতে হয়। প্রত্যেকের পরিবার, সমাজ, জেলা ও দেশের সংস্কৃতি রয়েছে, এগুলোর আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে এগুলো ধরে রাখতে হবে। এই বৈশিষ্ট্য আমাদের ঐতিহ্যের পরিচয় দেয়। ঐতিহ্য থেকে আমরা নিজেদের গর্ববোধ করতে পারি। ব্রিটিশ ইংরেজরা জোর করে তাদের সংস্কৃতি আমাদের মাঝে তাদের সংস্কৃতির চাপিয়ে দিয়ে তাদের অধীনস্থ করেছিল। তাই আমরা আমাদের নিজস্বতা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবো, তাহলে আমাদের স্বাধীনতা রক্ষিত রক্ষা হবে আমাদের গর্ব অহংকার অটুট থাকবে। সে জায়গা থেকে আমরা লালমনিরহাট বাসী গর্বিত।
জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি আরও বলেন,
লালমনিরহাটের তৎকালীন সময়ের একটা মর্ডান ঐতিহ্য ছিল এই এম. টি. হোসেন ইনসটিটিউটি। আমরা যে কোন জায়গা থেকে অনেক সুপ্রিয়র ছিলাম। এখনও আমরা সেটা ধরে রাখতে চাই। এটা কারো চেয়ে কম না, কারো কাছে কম হবে না এটাই আমাদের অঙ্গীকার।
এছাড়া বক্তব্য রাখেন লোকসংস্কৃতি গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্রের আহবায়ক সূফী মোহাম্মদ, লালমনিরহাট পৌরসভার মেয়র মোঃ রেজাউল করিম স্বপন, ড. মেহেজেবুন নেছা রহমান, সৈয়দপুর-কিশোরগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য আদেলুর রহমান আদেল, লালমনিরহাট জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক শেরিফা কাদের এমপি প্রমুখ। এ সময় লালমনিরহাট পৌরসভার মেয়রের সহধর্মিণী ও সমাজকর্মী জাকিয়া সুলতানা রিমু, লালমনিরহাট জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব জাহিদ হাসান লিমন, লালমনি লোকউৎসব উদযাপন পর্ষদের সদস্য সচিব মুনীম হোসেন খন্দকার প্রতীক, সদস্য শামীম আহমেদ, উৎসব উপ-কমিটির আহবায়ক মোঃ মাসুদ রানা রাশেদ, সদস্য সচিব মোঃ হেলাল হোসেন কবিরসহ অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
১ম দিনে- জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন, উদ্বোধনী আলোচনা, স্বাধীনতার ৫২ প্রদীপ প্রজ্জ্বলন এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩ তম জন্মবার্ষিকী এবং জাতীয় শিশু দিবসকে সামনে রেখে ১০৩ জন শিশুর কণ্ঠে উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন, লোকসঙ্গীত, লোকনাট্য, লোকমেলা, লোকজ প্রদর্শনী, লাইট এন্ড সাউন্ড শো করা হয়।
শুক্রবার (৩ মার্চ) ২য় দিনে- “আমাদের লোকসংস্কৃতি-কথা” শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এ সেমিনারে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হাবিব-উল-মাওলা (মাওলা প্রিন্স)-এঁর সভাপতিত্বে নূরিতা নূসরাত খন্দকার, মুনিম হোসেন খন্দকার প্রতীক-এঁর সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন (ভার্চুয়ালি) কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. এ কে এম জাকির হোসেন। রিসোর্স পার্সন ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. মোস্তফা তারিকুল আহসান, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ রশিদুজ্জামান, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান মোঃ বাকীবিল্লাহ (সাকার মুস্তফা। বক্তব্য রাখেন লোকসংস্কৃতি গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্রের আহবায়ক সূফী মোহাম্মদ প্রমুখ। লোকসংস্কৃতির বিভিন্ন দিক নিয়ে লেখা নির্বাচিত প্রাবন্ধিকগণের মধ্যে কবি, গল্পকার ও সংগঠক এ, এস, এম, হাবিবুর রহমান, দেলোযার হোসেন রংপুরী প্রমুখ পাঠ করেন। এ সময় লালমনি লোকউৎসব উপ-কমিটির আহবায়ক মোঃ মাসুদ রানা রাশেদ, সদস্য সচিব মোঃ হেলাল হোসেন কবিরসহ অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
এরপর লোকসঙ্গীত, লোকমেলা, লোকজ প্রদর্শনী, লাইট এন্ড সাউন্ড শো, পুতুল নাচ করা হয়।
শনিবার (৪ মার্চ) ৩য় দিনে- লালমনি লোকউৎসব এর সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও ঐতিহ্য সংস্কৃতি বিকাশ মঞ্চের সভাপতি আকতারী মমতাজ। বক্তব্য রাখেন লালমনি লোকউৎসব উপ-কমিটির সদস্য সচিব মোঃ হেলাল হোসেন কবির, উৎসব উদযাপন পর্ষদের সদস্য শামীম আহমেদ, লোকসংস্কৃতি গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্রের আহবায়ক সূফী মোহাম্মদ, লালমনিরহাট পৌরসভার মেয়র মোঃ রেজাউল করিম স্বপন, লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নজরুল হক পাটোয়ারী ভোলা প্রমুখ। এ সময় লালমনিরহাট পৌরসভার মেয়রের সহধর্মিণী ও সমাজকর্মী জাকিয়া সুলতানা রিমু, লালমনি লোকউৎসব উদযাপন পর্ষদের সদস্য সচিব মুনীম হোসেন খন্দকার প্রতীক, উৎসব উপ-কমিটির আহবায়ক মোঃ মাসুদ রানা রাশেদসহ অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
এরপর লোকনাট্য, লোকমেলা, লোকজ প্রদর্শনী, লাইট এন্ড সাউন্ড শো, পুতুল নাচ করা হয়।